![]() |
বিশ্ববাসীকে আনন্দে ভাসিয়ে নাসার রোভার ‘কিউরিওসিটি’ পা রেখেছে মঙ্গলগ্রহে৷ সেখানে সে থাকবে দুই বছর৷ এরপর মঙ্গল নিয়ে নাসা পরিকল্পনা কী? |
ছয় পা নিয়ে কিউরিওসিটি মঙ্গলে হেঁটে বেড়াবে৷ সেখানকার মাটি আর পরিবেশ
নিয়ে করবে গবেষণা৷ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে মঙ্গলে আদৌ প্রাণের অস্তিত্ব
ছিল কীনা৷পৃথিবী থেকে এই রোভারকে নিয়ন্ত্রণ করবেন নাসার বিজ্ঞানীরা৷ গবেষণা কাজে
সুবিধার জন্য রোভারকে মঙ্গলের ‘গেইল ক্রাটা' এলাকায় নামানো হয়েছে৷ গেইল
হচ্ছেন অস্ট্রেলীয় এক বিজ্ঞানী, যিনি উনিশ শতকের শেষের দিকে মঙ্গলে ঐ
এলাকার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানিয়েছিলেন৷
গেইল ক্রাটা নির্বাচনের কারণ, এলাকাটি নীচু৷ নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু পানি নীচের দিকে প্রবাহিত হয় তাই সেখানে পানির অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ আর সেটা যদি হয় তাহলে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব জানার যে চেষ্টা বিজ্ঞানীদের সেটা সফল হবে৷
![]() |
গবেষণা কাজে সুবিধার জন্য রোভারকে মঙ্গলের ‘গেইল ক্রাটা' এলাকায় নামানো হয়েছে |
কিউরিওসিটি রোভারটি মঙ্গলে নামার পর বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছে৷ প্রথম দিকে
সাদাকালো ছবি পাঠালেও পরে রঙিন ছবিও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ এমনি একটি ছবিতে
দেখা যাচ্ছে, রোভারটি যেখানে অবস্থান করছে সেখান থেকে কিছু দূরে পাহাড়ের
মতো একটা উঁচু স্থান রয়েছে৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওটা ‘মাউন্ট শার্প'৷ যার
উচ্চতা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার৷ এই পাহাড়টি পলি দিয়ে তৈরি৷ এবং এই পলি থেকেই
গেইল ক্রাটার জন্ম বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস৷ নাসার এই রোভারটি ঐ পাহাড়ে উঠবে, সেখানকার মাটি পরীক্ষা করে দেখবে৷ এরপরই
আসলে বিজ্ঞানীরা তাদের ধারণাগুলো নিশ্চিত হতে পারবেন৷এমনি আরও নানা পরীক্ষা
নিরীক্ষা করবে কিউরিওসিটি৷ প্রাথমিকভাবে গবেষণার
সময়কাল দুই বছর ধরা হলেও অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন সময়টা বাড়বে৷নাসার এই
পুরো প্রকল্পে খরচ হচ্ছে আড়াইশো কোটি ডলার৷ স্বভাবতই টাকাটা দিচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্র সরকার৷কিন্তু এরপর কী? কিউরিওসিটি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে
পরবর্তীতে কী করা
হবে৷ এ ব্যাপারে নাসার মঙ্গল অভিযানের প্রধান ডাউগ ম্যাককুইশান বলছেন, পরের
কাজ হবে গেইল ক্রাটা ছাড়িয়ে মঙ্গলের অন্যান্য অঞ্চলেও রোভার পাঠানো৷
কিন্তু সেজন্য টাকা পাওয়া যাবে কীনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন
তিনি৷কেননা কিউরিওসিটির জন্য আড়াইশো কোটি ডলার ছাড়াও হাবল টেলিস্কোপের
উত্তরসূরি ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ' প্রকল্পের পেছনেও প্রচুর অর্থ দিতে
হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে৷২০১৮ সালে এটি মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করা
হচ্ছে৷ এর জন্য ব্যয় ধরা
হচ্ছে সাড়ে আটশো কোটি ডলারেরও বেশি৷ ইউরোপীয় ও ক্যানাডীয় মহাকাশ সংস্থা এই
প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিলেও নাসাকে যেটা দিতে হবে সেটাও কম নয়৷ ফলে
মঙ্গলের জন্য আবারও পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যাবে না, এটাই ধরে নেয়া হচ্ছে৷
তাই আগামী মাসে হোয়াইট হাউজের কাছে নাসা যে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে
ধরবে তাতে মঙ্গলের জন্য কম খরচের প্রকল্পই প্রস্তাব করা হবে বলে জানা গেছে৷
নাসা সাধারণত এই পরিকল্পনা প্রস্তাবের সময় সেটা বাস্তবায়নে কত খরচ হতে
পারে সেটাও জানিয়ে থাকে হোয়াইট হাউজকে৷ সেটার উপর ভিত্তি করে সরকার
সামর্থ্য অনুযায়ী নাসার বাজেট বরাদ্দ দিয়ে থাকে৷
![]() |
কিন্তু এরপর কী? কিউরিওসিটি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে পরবর্তীতে কী করা হবে |
এখন বাজেট নিয়ে টানাটানি হলেও নাসার পরিকল্পনা ছিল, বা হয়তো এখনো আছে,
আগামী ২০৩০ সালের পর কোনো একসময় মঙ্গলে মানুষ পাঠানো৷ এ লক্ষ্যে মঙ্গল নিয়ে
একসঙ্গে কাজ করতে ২০০৯ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইসা'র সঙ্গে একটি
চুক্তিও করেছিল নাসা৷ কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে পরে সেই চুক্তি থেকে সরে
আসে নাসা৷ এদিকে, নাসা সরে যাওয়ায় ইসা এখন রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস'এর সঙ্গে
কাজ করতে যাচ্ছে৷ গত এপ্রিলে দুই সংস্থা যৌথভাবে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,
২০১৬ সাল থেকে তারা মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার কাজ শুরু করবে৷
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬০ কোটি ডলার৷ কিউরিওসিটি প্রকল্পের চেয়ে প্রায়
৯০ কোটি ডলার কম৷ নভেম্বরে ইসা ও রসকসমসের মধ্যে এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি
স্বাক্ষরিত হবে বলে জানা গেছে৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন