মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১২

শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির বিমান

সাবসনিক, সুপারসনিক, হাইপারসনিক৷ যাত্রীবাহী বিমান চলে সাবসনিক গতিতে৷ অর্থাৎ শব্দের চেয়ে কম গতিতে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র একটি হাইপারসনিক বিমানের পরীক্ষণ ফ্লাইট চালিয়েছে৷ যেটি উড্ডয়নের ৩১ সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে৷
যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষণমূলক এই বিমানটির নাম ‘ওয়েভরাইডার' বা এক্স-৫১এ৷ এটি শব্দের গতির চেয়ে ছয়গুন বেশি জোরে চলতে চেয়েছিল৷ অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার বেগে৷ এর ফলে নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন যেতে সময় লাগতো এক ঘণ্টার চেয়েও কম৷ বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমানগুলো চলে ৮০০ থেকে ৯৫০ কিলোমিটার বেগে৷

যুক্তরাষ্ট্রের এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য অবশ্য যাত্রী বহন নয়৷ তাদের লক্ষ্য এই গতিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে এক ঘন্টার মধ্যে হামলার যোগ্যতা অর্জন৷ সেজন্য ওয়েভরাইডারকে বিমান বলা হলেও এটা হতে পারে একটা ক্ষেপণাস্ত্র, যেটা অস্ত্র নিয়ে ছুটে গিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে৷
পরীক্ষণ চলাকালে বিজ্ঞানীদের আশা ছিল ওয়েভরাইডারকে অন্তত পাঁচ মিনিট ওড়ানোর৷ কিন্তু মাত্র ৩১ সেকেন্ডই প্রশান্ত মহাসাগরে ভেঙে পড়ে মনুষ্যবিহীন এই ফ্লাইটটি৷ বিমানের ‘ফিন' বা ডানায় ত্রুটির কারণে পরীক্ষাটি সফল হয়নি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা৷
এই প্রকল্পে কত খরচ হয়েছে সেটা জানায়নি মার্কিন বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ৷ বোয়িং কোম্পানির প্রকৌশলীরা এই বিমানের নকশা ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজটি করেছেন৷
বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাদের কাছে আরও একটি ওয়েভরাইডার রয়েছে৷ সেটাকে দিয়ে ভবিষ্যতে আবারও পরীক্ষা চালানো হবে কিনা - সেটা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ এর আগে ২০১০ সালে পরিচালিত আরেকটি পরীক্ষায় ওয়েভরাইডার তিন মিনিটের একটু বেশি সময় ধরে শব্দের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি গতিতে চলেছিল৷
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য অবশ্য যাত্রী বহন নয়৷ তাদের লক্ষ্য এই গতিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে এক ঘন্টার মধ্যে হামলার যোগ্যতা অর্জন।




তবে অ্যামেরিকা হামলা চালানোর জন্য হাইপারসনিক বিমান তৈরির পরিকল্পনা করলেও ইউরোপ কাজ করছে হাইপারসনিক যাত্রীবাহী বিমান তৈরির৷ শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি জোরে চলার পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা যে বিমান তৈরির পরিকল্পনা করছেন তার নাম ‘এ২'৷ এটা সম্ভব হলে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি যেতে সময় লাগবে মাত্র ২-৪ ঘণ্টা৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৪০ সালের আগে এ ধরণের বিমান ওড়ার সম্ভাবনা নেই৷
ইউরোপীয় কমিশন এর খরচ বহন করছে৷ শুরুতে এই প্রকল্পের জন্য ১০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ আগামী বছর প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে৷
তবে সুপারসনিক বিমান কনকর্ডের অতীত ইতিহাসের কারণে হাইপারসনিক বিমানে চড়ার স্বপ্ন মানুষের পূরণ হবে কিনা - তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ কেননা হাইপারসনিক বিমান বানানো সম্ভব হলেও এর টিকিটের যে দাম হবে সেটা দিয়ে বিমান কোম্পানিগুলো লাভবান হতে পারবে কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন৷
কনকর্ড বিমানের একটা টিকিটের মূল্য ছিল যাত্রীবাহী বিমানের প্রথম শ্রেণির টিকিট মূল্যের চেয়েও প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি৷ ফলে সেটা সাধারণ যাত্রীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল৷ তাই কনকর্ডকে আর না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আর এয়ার ফ্রান্স৷ এই দুই কোম্পানিরই শুধু কনকর্ড বিমান ছিল৷ অবশ্য ২০০০ সালে একটি কনকর্ড বিমানের দুর্ঘটনাও কনকর্ড বন্ধ করে দেয়ার অন্যতম একটা কারণ ছিল৷
‘বিজনেস ট্রাভেলার' ম্যাগাজিনের টম ওটলে বলছেন, যাত্রীদের কাছে তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেয়ে কম খরচ আর আরাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ ফলে হাইপারসনিক বিমানের পরিণতি কনকর্ডের মতোই হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে ধনী ব্যক্তিরাও টাকা বাঁচাতে সরাসরি ফ্লাইটের চেয়ে ‘সরাসরি নয়' এমন ফ্লাইটই পছন্দ করেন৷
এদিকে ‘রিঅ্যাকশন ইঞ্জিনস' নামের একটি কোম্পানি যারা হাইপারসনিক বিমান তৈরির কাজে জড়িত তারা বলছে, এই বিমানের টিকিটের মূল্য সাধারণ বিমানের ‘বিজনেস ক্লাস'-এর মূল্যের সমান হবে৷
তবে সমালোচকরা বলছেন, এটা তখনই সম্ভব যদি হাইপারসনিক বিমান জ্বালানি হিসেবে তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে পারে৷ কিন্তু এজন্য পর্যাপ্ত তরল হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভব হবে কিনা - তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সমালোচকরা৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন